ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সৌদি আরবের রিয়াদে কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের মহেষকুড়া বিরাশি গ্রামের রিপন মল্লিক। মৃত্যুর এক মাস অতিবাহিত হলেও এখনো তার মরদেহটি পরিবারের কাছে এসে পৌঁছেনি। বর্তমানে তার মরদেহটি রিয়াদের একটি বেসরকারি হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এদিকে রিপন মল্লিকের মরদেহটি দেশের বাড়িতে না পৌঁছায় থামছে না দুই সন্তান, স্ত্রী ও স্বজনদের আহাজারি।

স্থানীয় সূত্র ও পরিবার জানায়, গত প্রায় ২২ বছর আগে ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যান খারুয়া ইউনিয়নের মহেষকুড়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিন মল্লিকের ছেলে রিপন মল্লিক। পরে তিনি দেশটির চলমান আইন অনুযায়ী বিজনেস পেশার আইডি কার্ডও পান তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রিয়াদের ফাহাত এ এল রাসেদ গ্রুপ ফর কনস্ট্রাকশন নামক একটি কম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

এর মধ্যে দেশে আসা যাওয়ায়ও করেছেন বেশ কয়েকবার। তার স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে ১৬ বছরের কন্যা ও ১৩ বছর বয়সের ছেলে সন্তান এবং পরিবারের লোকজন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তার একেবারে দেশের আসার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে ভর্তি করানো হয় রিয়াদের একটি সরকারি হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সৌদি আরবে চাকরিরত তার ছোট ভাই আব্দুল জলিল মল্লিক জানান, মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতিকালে একটি বেসরকারি হাসপাতালের লোকজন মরদেহ থেকেই করোনার নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর জানা যায় তার ভাই করোনা পজিটিভ হয়েই মারা গেছেন। এতে বিপত্তি ঘটে মরদেহ দেশে পাঠানো নিয়ে। একপর্যায়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয় মরদেহ নিতে হলে বিশেষ উপায়ে প্যাকেট করে নিতে হবে।

এই জন্য দুই হাসপাতালেই দুই দফায় ১০ ও ৬ হাজার রিয়েল জমা দেওয়া হয়। তারপরও মরদেহ দেশে পাঠানোর কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দূতাবাস। সেখানকার লোকজন এ বিষয়ে আর কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। এ অবস্থায় এক রকম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। এখনো লাশ হাসপাতালে বাক্সবন্দি রয়েছে। মেয়ে রাইডা ও ছেলে সাদ বলে, বাবা মারা গেলে তো লাশ পাইতাম।

তাহলে বাবা কোথায়?

আমার বাবাকে আমাদের কাছে চাই। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা। গত এক মাস ধরেই এই কান্না থামছে না। এ বিষয়ে সৌদি আরব শ্রম কল্যাণ উইং দ্বিতীয় সচিব মো. সফিউল ইসলাম গতকাল বুধবার সকালে কালের কণ্ঠকে জানান, করোনায় কেউ মারা গেলে সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী মরদেহ তিন দিনের মধ্যে দাফন করতে হয়। দেশে পাঠানোর কোনো নিয়ম নেই। তবে মরদেহ এখনো কেন বাক্সবন্দি অবস্থায় হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই।